Ads

SEARCH

Monday, 21 April 2025

রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (Retinal Detachment)

রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (Retinal Detachment) 



রেটিনাল ডিটাচমেন্ট কী?


রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হলো রেটিনার নিউরোসেন্সরি লেয়ার (Neurosensory Retina) রেটিনার নিচের রেটিনাল পিগমেন্ট এপিথেলিয়াম (Retinal Pigment Epithelium - RPE) থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। এর ফলে রেটিনার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে বা স্থায়ী অন্ধত্ব হতে পারে।


রেটিনাল ডিটাচমেন্ট কেনো হয়? (Causes of Retinal Detachment)


রেটিনাল ডিটাচমেন্ট সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে হতে পারে:


১. রেটিনায় ছিদ্র বা টিয়ার (Rhegmatogenous Retinal Detachment - RRD)


✅ রেটিনার একটি ছিদ্র বা ফাটল দিয়ে ভিট্রিয়াস (চোখের জেলি) প্রবেশ করে, যা রেটিনাকে নিচের স্তর থেকে আলাদা করে দেয়।
✅ মায়োপিয়া (উঁচু পাওয়ার যুক্ত চশমা পরা ব্যক্তি) ও বয়সজনিত ভিট্রিয়াস ডিটাচমেন্ট (Posterior Vitreous Detachment - PVD) এই ধরনের ডিটাচমেন্টের অন্যতম কারণ।
✅ চোখে আঘাত (Trauma) বা অস্ত্রোপচারের পরও এটি হতে পারে।

২. ট্রাকশনাল রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (Tractional Retinal Detachment - TRD)


✅ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (Diabetic Retinopathy), রেটিনাল ভেইন অবস্ট্রাকশন (Retinal Vein Occlusion), রেটিনাল ইনফেকশন (Retinal Infection) ইত্যাদির কারণে রেটিনার উপর ফাইব্রোটিক টিস্যু টান দিতে থাকে, যার ফলে রেটিনা ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যায়।

৩. এক্সুডেটিভ বা সিরোসাল রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (Exudative Retinal Detachment - ERD)

✅ রেটিনার নিচে তরল জমে রেটিনাকে আলাদা করে দেয়।
✅ ইনফ্লেমেটরি ডিজঅর্ডার (Inflammation), টিউমার (Tumor) বা কোয়াটসানের রোগ (Coats' Disease) এর জন্য হতে পারে।


রেটিনাল ডিটাচমেন্টের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Retinal Detachment)


১. রোগের ধরণ অনুযায়ী


✅ (a) Rhegmatogenous Retinal Detachment (RRD) → ছিদ্র বা ফাটলের কারণে হয়।
✅ (b) Tractional Retinal Detachment (TRD) → টান বা আকর্ষণের কারণে হয়।
✅ (c) Exudative Retinal Detachment (ERD) → তরল জমার কারণে হয়।

২. অবস্থা অনুযায়ী (Stages of Retinal Detachment)


✅ (a) Stage 1: রেটিনায় ছোট টিয়ার বা ছিদ্র আছে, কিন্তু ডিটাচমেন্ট হয়নি।
✅ (b) Stage 2: রেটিনা আংশিকভাবে আলাদা হয়েছে।
✅ (c) Stage 3: সম্পূর্ণ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হয়েছে এবং দৃষ্টিশক্তি বিপর্যস্ত।
✅ (d) Stage 4: মোটামুটি পুরোটাই আলাদা হয়েছে এবং রেটিনা সংকুচিত হয়েছে (Total Retinal Detachment with PVR - Proliferative Vitreoretinopathy)।

রেটিনাল ডিটাচমেন্টের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ ও উপসর্গ (Clinical Features of Retinal Detachment)


প্রাথমিক লক্ষণ (Early Symptoms)


✅ ফ্লোটার (Floaters): চোখের সামনে ছোট ছোট কালো বিন্দু বা রেখা দেখা যায়।
✅ ফটপসিয়া (Photopsia): চোখের কোণায় হঠাৎ ঝলকানো আলো দেখা যেতে পারে।
✅ আংশিক ভিশন লস (Partial Vision Loss): দৃষ্টিক্ষেত্রের একপাশে পর্দার মতো কিছু আস্তে আস্তে নেমে আসছে বলে মনে হয়।

উন্নত পর্যায়ের লক্ষণ (Advanced Symptoms)


✅ দৃষ্টিক্ষেত্রের (Visual Field) বড় অংশ অন্ধকার বা ব্লাইন্ড স্পট তৈরি হয়।
✅ কেন্দ্রীয় দৃষ্টি নষ্ট হতে শুরু করে (Macular Involvement হলে)।
✅ আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।
✅ চোখে চাপ বা ভারী লাগতে পারে।

রেটিনাল ডিটাচমেন্টের জটিলতা (Complications of Retinal Detachment)


✅ স্থায়ী দৃষ্টিহীনতা (Permanent Blindness) → চিকিৎসা না করা হলে।
✅ প্রলিফারেটিভ ভিট্রিওরেটিনোপ্যাথি (PVR) → রেটিনা সংকুচিত হয়ে যায়, যার ফলে অস্ত্রোপচার কঠিন হয়ে পড়ে।
✅ গ্লুকোমা (Glaucoma) → চোখের ভেতরে অতিরিক্ত চাপ বাড়তে পারে।
✅ ফাইব্রোসিস (Fibrosis) বা দাগ পড়ে যাওয়া → রেটিনার স্বাভাবিক কাঠামো নষ্ট হতে পারে।


রেটিনাল ডিটাচমেন্টের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ (Treatment & Prevention of Retinal Detachment)

চিকিৎসা (Treatment of Retinal Detachment)


রেটিনাল ডিটাচমেন্ট অত্যন্ত জরুরি মেডিকেল কন্ডিশন। এটি অবহেলা করলে স্থায়ী দৃষ্টিহীনতা হতে পারে। চিকিৎসা প্রধানত শল্যচিকিৎসার (Surgical) মাধ্যমে করা হয়।

১. লেজার বা ক্রায়োথেরাপি (Laser or Cryotherapy) – প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা

✅ যদি রেটিনায় ফাটল (Retinal Tear) বা ছোট ছিদ্র (Hole) পাওয়া যায়, কিন্তু সম্পূর্ণ ডিটাচমেন্ট হয়নি, তবে লেজার বা ক্রায়োথেরাপি করা হয়।
✅ লেজার ফটো-কোয়াগুলেশন (Laser Photocoagulation): লেজারের মাধ্যমে রেটিনার চারপাশ পোড়ানো হয়, যাতে তা আরও আলাদা না হয়।
✅ ক্রায়োথেরাপি (Cryopexy): ঠান্ডা তরঙ্গ দিয়ে রেটিনার ছিদ্র সিল করে দেওয়া হয়।
✅ এই চিকিৎসা সাধারণত আউটডোরে করা যায় এবং সার্জারির প্রয়োজন হয় না।

২. রেটিনাল ডিটাচমেন্ট সার্জারি (Surgical Treatment for Retinal Detachment)

যদি রেটিনা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আলাদা হয়ে যায়, তবে অস্ত্রোপচার একমাত্র সমাধান। সার্জারির ধরণ রেটিনার অবস্থা ও রোগীর বয়সের উপর নির্ভর করে।

(A) স্ক্লেরাল বাকলিং (Scleral Buckling Surgery) – প্রচলিত সার্জারি

✅ রেটিনার ফাটল বা ছিদ্র বন্ধ করতে চোখের বাইরের সাদা অংশের (Sclera) উপর সিলিকনের স্ট্রিপ বা ব্যান্ড বসানো হয়।
✅ এটি রেটিনাকে তার আসল অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
✅ সাধারণত তরুণ রোগীদের জন্য বেশি কার্যকর।

(B) ভিট্রেক্টমি (Vitrectomy) – উন্নত সার্জারি

✅ যদি রেটিনাল ডিটাচমেন্ট বেশি জটিল হয়, বিশেষ করে ট্রাকশনাল বা RRD হলে, তবে ভিট্রেক্টমি করা হয়।
✅ চোখের অভ্যন্তরের ভিট্রিয়াস জেল অপসারণ করে বিশেষ গ্যাস (SF6 / C3F8) বা সিলিকন অয়েল ঢোকানো হয়, যা রেটিনাকে সঠিক জায়গায় রাখে।
✅ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে হওয়া ট্রাকশনাল রেটিনাল ডিটাচমেন্টের জন্য বেশি কার্যকর।

(C) এয়ার বা গ্যাস ইনজেকশন (Pneumatic Retinopexy) – সহজ পদ্ধতি

✅ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে গ্যাসের বুদবুদ (Gas Bubble) ব্যবহার করে রেটিনাকে সঠিক স্থানে বসানো হয়।
✅ এরপর লেজার বা ক্রায়োথেরাপির মাধ্যমে ছিদ্র বন্ধ করা হয়।
✅ এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র ছোট ও কম জটিল রেটিনাল ডিটাচমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হয়।


---

প্রতিরোধ (Prevention of Retinal Detachment)

রেটিনাল ডিটাচমেন্ট প্রতিরোধের জন্য সঠিক সময়ে চোখের পরীক্ষা করা ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা জরুরি।

✅ ১. নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা (Regular Eye Check-up)

বিশেষত উচ্চ মায়োপিয়া (উঁচু পাওয়ার বিশিষ্ট চশমা) থাকলে বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে চেকআপ করানো উচিত।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চোখের পর্দা পরীক্ষা জরুরি।


✅ ২. চোখে আঘাত এড়ানো (Protect Your Eyes from Injury)

কোনো ধরনের ক্রীড়া (যেমন: ফুটবল, বক্সিং) বা শ্রমসাধ্য কাজ করলে চোখ রক্ষার জন্য সুরক্ষিত চশমা ব্যবহার করুন।

চোখে সরাসরি আঘাত লাগলে দ্রুত চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


✅ ৩. রেটিনাল টিয়ার বা ছিদ্র থাকলে আগেই চিকিৎসা করুন

রেটিনার ছোট ছিদ্র থাকলে তা আগে থেকেই লেজার বা ক্রায়োথেরাপি করে বন্ধ করা যায়, যাতে ডিটাচমেন্ট না হয়।


✅ ৪. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে রেটিনায় ক্ষতি হতে পারে, যা পরবর্তীতে রেটিনাল ডিটাচমেন্টের ঝুঁকি বাড়ায়।


✅ ৫. চোখের ফ্লোটার বা আলোর ঝলকানি দেখলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান

হঠাৎ চোখে ফ্লোটার (Floaters) বা আলোর ঝলকানি (Flashes of Light) দেখলে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি রেটিনাল টিয়ারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।



সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

✔ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করালে স্থায়ী দৃষ্টিহীনতা হতে পারে।
✔ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে লেজার বা ক্রায়োথেরাপি করা যেতে পারে।
✔ অগ্রসর পর্যায়ে অস্ত্রোপচার (স্ক্লেরাল বাকলিং, ভিট্রেক্টমি বা গ্যাস ইনজেকশন) প্রয়োজন হয়।
✔ উঁচু পাওয়ার (Myopia), ডায়াবেটিস বা চোখে আঘাতের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
✔ যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে দেরি না করে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

THANK YOU FOR READING. PLEASE LIKE SHARE & FOLLOW OUR PAGE.