Ads

SEARCH

Sunday, 30 March 2025

ভিট্রিয়াস হেমারেজ (Vitreous Hemorrhage)



ভিট্রিয়াস হেমারেজ (Vitreous Hemorrhage) কি?

ভিট্রিয়াস হেমারেজ হলো চোখের ভেতরের স্বচ্ছ জেলির মতো পদার্থ ভিট্রিয়াস হিউমার-এ রক্তপাত হওয়া। এটি সাধারণত রেটিনার রক্তনালীগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, ফ্লোটার (কালো বিন্দু বা দাগ) দেখা যায় এবং কখনো কখনো সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি থাকে।


ভিট্রিয়াস হেমারেজের ধরন (Types of Vitreous Hemorrhage):-

ভিট্রিয়াসে রক্তপাত বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে, যা মূলত তিন ধরনের হয়—

1. প্রিট্রিয়াল হেমারেজ (Preretinal Hemorrhage):

রেটিনা এবং ভিট্রিয়াসের মধ্যে রক্ত জমে।
ফ্লোটার এবং দৃষ্টির ঝাপসা দেখা যায়।



2. ইন্ট্রাভিট্রিয়াল হেমারেজ (Intravitreal Hemorrhage):

ভিট্রিয়াস জেলের মধ্যে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে।
আকস্মিকভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।



3. সাবহাইলোয়েড হেমারেজ (Subhyaloid Hemorrhage):

ভিট্রিয়াস জেলি ও রেটিনার হায়লোয়েড মেমব্রেনের মধ্যে রক্ত জমা হয়।

দৃষ্টিতে লালচে ভাব বা ছায়া দেখা যায়।



ভিট্রিয়াস হেমারেজের কারণ (Causes of Vitreous Hemorrhage)


ভিট্রিয়াস হেমারেজের প্রধান কারণগুলো হলো—

1. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (Diabetic Retinopathy):

ডায়াবেটিসজনিত চোখের জটিলতা, যা নতুন দুর্বল রক্তনালী তৈরি করে, এবং এগুলো ফেটে গেলে রক্তপাত হয়।



2. রেটিনাল টিয়ার বা রেটিনাল ডিটাচমেন্ট:

রেটিনায় ছিঁড়ে গেলে বা আলাদা হলে রক্তপাত হতে পারে।



3. ট্রমা বা চোখের আঘাত:

চোখে সরাসরি আঘাত লাগলে রক্তনালীগুলো ফেটে যেতে পারে।



4. ভ্যাস্কুলার ডিজঅর্ডার (Vascular Disorders):

উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের অতিরিক্ত তরলতা বা রক্তনালীর দুর্বলতা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।



5. রেটিনাল ভেইন অবস্ট্রাকশন (Retinal Vein Occlusion):

রক্তনালীতে ব্লক হলে ভিট্রিয়াসে রক্ত জমতে পারে।



6. এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (Age-Related Macular Degeneration - AMD):

বয়সজনিত কারণে রেটিনার ক্ষতি হলে রক্তপাত হতে পারে।



ভিট্রিয়াস হেমারেজের লক্ষণ (Symptoms)


👉আকস্মিক দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।

👉চোখের সামনে কালো দাগ বা ফ্লোটার দেখা।

👉লালচে বা কালচে দৃষ্টি।

👉চোখের আলোতে সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া।

👉সম্পূর্ণ অন্ধকার বা ঝাপসা দৃষ্টি (গুরুতর ক্ষেত্রে)।


চিকিৎসা (Treatment of Vitreous Hemorrhage)


চিকিৎসার ধরণ রক্তপাতের পরিমাণ এবং কারণের উপর নির্ভর করে—

১. পর্যবেক্ষণ (Observation & Rest)

ছোটখাটো হেমারেজ হলে সাধারণত বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে রক্ত শোষিত হয়ে যায়।

মাথা উঁচু করে শোয়া এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে বলা হয়।


২. ওষুধ (Medications)

অ্যান্টি-ভিইজিএফ ইনজেকশন (Anti-VEGF Therapy): ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে যদি নতুন রক্তনালী তৈরি হয়, তবে এটি বন্ধ করতে ইনজেকশন দেওয়া হয়।

প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।


3. লেজার চিকিৎসা (Laser Therapy / Photocoagulation)

যদি রেটিনার ছিঁড়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালী থাকে, তবে লেজার চিকিৎসা করা হয়।


4. অস্ত্রোপচার (Surgical Treatment)

ভিট্রেকটমি (Vitrectomy):

যদি রক্ত ২-৩ মাসেও না শোষিত হয় বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে অস্ত্রোপচার করে ভিট্রিয়াস জেলি সরিয়ে ফেলা হয়।



প্রতিরোধ (Prevention of Vitreous Hemorrhage)

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন

⃣রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
👉নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান।


২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

উচ্চ রক্তচাপ চোখের রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।


৩. চোখে আঘাত এড়িয়ে চলুন

ক্রীড়া বা নির্মাণকাজের সময় সুরক্ষামূলক চশমা পরুন।


৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন

👉ভিটামিন এ, সি, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান।

👉ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।


৫. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান

👉বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

👉যদি ঝাপসা দৃষ্টি, ফ্লোটার বা আলো ঝলকানি দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

উপসংহার

ভিট্রিয়াস হেমারেজ হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ হতে পারে, তবে এটি সাধারণত চিকিৎসাযোগ্য। রোগের কারণ দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা সম্ভব। অতএব, চোখের যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


THANK YOU FOR READING. PLEASE LIKE SHARE & FOLLOW OUR PAGE.

Related Posts: