Facebook SDK

header ads

অ্যানিমিয়া

 রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হলো রক্তকোষ ও রক্তরস। লোহিত রক্তকণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন নামের রঞ্জক পদার্থ, যা দেহের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সারা শরীরে দেখা দেয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। আর রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার নাম হলো অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।

কেন হয় অ্যানিমিয়া?

নানা কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির কাঁচামাল আয়রন কমে গেলে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা হতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি, দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন কিডনি বিকল), দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ (যেমন যক্ষ্মা), ক্যানসার, থাইরয়েডের সমস্যা, অস্থিমজ্জায় সমস্যা, সময়ের আগে রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে রক্তশূন্যতার কারণ। তবে সব ধরনের কারণের মধ্যে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এর হার বেশি। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ে শিশুর ওপর, মাতৃমৃত্যুর হারও যায় বেড়ে।

কেন আয়রনের ঘাটতি?

প্রধান কারণ অপুষ্টি। খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আয়রনের ঘাটতি হয়। আরেকটি কারণ নারীদের অতিরিক্ত মাসিকে রক্তক্ষরণ। অন্য কোনো কারণে দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণ থাকতে পারে, যেমন পেপটিক আলসার, কৃমি, পাইলস, অন্ত্রে বা পাকস্থলীতে ক্যানসার, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক সেবন ইত্যাদি।

কীভাবে বুঝবেন?

চোখ-মুখ ফ্যাকাশে মনে হওয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি, অবসাদ, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, মুখে-ঠোঁটে ঘা ইত্যাদি রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণ। রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। রক্তশূন্যতা সন্দেহ করা হলে রক্তের একটি কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করা জরুরি। এটি দেখে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও লোহিত কণিকার পরিমাণ, আকার, রঞ্জক পদার্থের ঘনত্ব ও মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক আরবিসি ইনডেক্স দেখে রক্তশূন্যতার কারণ অনুমান করতে পারেন। তবে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করার জন্য পরে অন্যান্য পরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা কী?

রক্তশূন্যতা হলে আয়রন বড়ি কিনে খেলেই হলো—এ ধারণা ঠিক নয়। রক্তশূন্যতার চিকিৎসার মূল বিষয় কারণটি খুঁজে বের করা। যেমন পেপটিক আলসার, পাইলস বা ক্যানসার শনাক্ত করা বা কেন মাসিকে বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা খোঁজা। রোগীকে আয়রনের ঘাটতি পূরণে মুখে বড়ি দেওয়া হবে, না শিরাপথে আয়রন দেওয়া হবে, তা রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন।

আগামীকাল পড়ুন: অপরিণত শিশুর জন্ম

প্রশ্ন-ত্তর

প্রশ্ন: মাসিক অনিয়মিত, শুরু হতেও বিলম্ব হয়। আবার একবার শুরু হলে একটানা এক-দুই মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। সমাধান দিলে উপকৃত হব।

উত্তর: নানা কারণে মাসিকের সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড ও অন্যান্য হরমোনের সমস্যা, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে কোনো টিউমার, ফাইব্রয়েড বা সিস্ট থাকতে পারে। আপনি একজন গাইনি বিশেষজ্ঞর পরামর্শে হরমোন পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিত হয়ে নিন।


অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা খুবই সাধারণ বা কমন একটি সমস্যা। কিন্তু কমন সমস্যা হলেই যে গুরুত্বহীন হবে তার কিন্তু কোনও মানে নেই। আমাদের শরীরের একটি অংশের থেকে আরেক অংশের যোগসূত্র রক্ষা করে এই রক্ত। শরীরের যাবতীয় উপকারী কণা অর্থাৎ ভিটামিন, প্রোটিন বা অন্য যা কিছু হোক না কেন, তা কিন্তু প্রবাহিত হয় এই রক্তার মাধ্যমেই। তাই রক্তের কোনও রকম ঘাটতি কিন্তু আমাদের শরীরের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই এখনই জেনে নিন রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার কী কী কারণ, অ্যানিমিয়া হলে তাঁর লক্ষণই বা কী কী। এর সঙ্গেই আজকের আর্টিকেলে রইল অ্যানিমিয়া হলে ঠিক কী কী করণীয় সেই নিয়েও কিছু কথা।

অ্যানিমিয়া কেন হয়

অ্যানিমিয়া

আমাদের রক্তের প্রধান উপাদান হল লোহিত রক্ত কণিকা। এই লোহিত রক্ত কণিকা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই দরকারি। 

লোহিত রক্ত কণিকায় আছে হিমোগ্লোবিন, প্রোটিন এবং আয়রন। এই সবের সাহায্যেই রক্ত পুষ্টিগুণ শরীরের এক অংশ থেকে আরেক অংশে নিয়ে যায়, বিশেষত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন।

কিন্তু অ্যানিমিয়া হলেই এই লোহিত রক্ত কণিকা কমতে শুরু করে। আর লোহিত রক্ত কণিকা কমা মানেই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, যা একদমই ভালো নয়। মূলত ৪০০ রকমের অ্যানিমিয়া না কি হয়।

তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া, ব্লাড লস অ্যানিমিয়া, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া আরও অনেক।

অ্যানিমিয়া হওয়ার কারণকে মূলত এই তিন বড় ভাগে দেখা যেতে পারে,

১. রক্ত কমার ফলে অ্যানিমিয়া

রক্ত কমার ফলে অ্যানিমিয়া

আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া এই ভাগে পড়তে পারে। যখন শরীর থেকে রক্ত কমতে থাকে, তখন শরীরের টিস্যুর রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়। আর তখনই এই জল বাকি রক্তকে বেশি তরল করে দেয় বা লোহিত রক্ত কণিকাকে তরল করে দেয়। নানা কারণেই কিন্তু এই রক্তক্ষরণ হতে পারে। যদি আপনার আলসার বা ক্যানসার থাকে, অথবা অ্যাসপিরিন বা এই জাতীয় ড্রাগ নিয়মিত খেতে থাকেন তাহলে যেমন অ্যানিমিয়া হয়, তেমনই মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ে অনেকটা রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

২. রক্ত কণিকার উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে

আমাদের হাড়ের মধ্যে একটি নরম টিস্যু আছে, যার নাম বোন ম্যারো। এই বোন ম্যারো স্টেম সেল তৈরি করে, যা পরে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকায় পরিণত হয়। এই বোন ম্যারো নষ্ট হয়ে যায় অনেক রকম রোগের জন্য, যার মধ্যে একটি হল লিউকোমিয়া। এছাড়া বারে বারে রক্ত দিলে আয়রন কমে যায় আর লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হতে পারে না। তেমনই থ্যালাসেমিয়া হলেও রক্ত কণিকা ভালো করে তৈরি হয় না। আর রক্ত কণিকা তৈরি হয় না ভিটামিন কমে গেলে। ভিটামিন বি-১২ আর ফোলেট খুবই দরকারি রক্ত কণিকা তৈরির জন্য। এর অভাবেও অ্যানিমিয়া হয়।

৩. লোহিত কণিকার ধ্বংস

লোহিত কণিকার আয়ু মূলত ১২০ দিন। কিন্তু তার আগেও অনেক সময়ে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে যেতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু কারণে যেমন সাপে কামড়ালে, ইনফেকশন হলে, নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিনের পর দিন নিলে অটোইমিউন হেমালিটিক অ্যানিমিয়া হয় আর তার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোহিত রক্ত কণিকাকেই শত্রু মনে করে ধ্বংস করতে যায়।

কী কী উপসর্গ অ্যানিমিয়ার

অ্যানিমিয়ার নানা রকমের উপসর্গ আছে

অ্যানিমিয়ার নানা রকমের উপসর্গ আছে। তার মধ্যে কয়েকটি খুবই কমন। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে এনার্জি কমে যাওয়া। এর পাশাপাশি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, একেবারে ভালো করে শ্বাস নিতে না পারা, বুকে ব্যাথা, মাথা যন্ত্রণা এই সব হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে জ্বর, ডায়েরিয়া বা জন্ডিসের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।

কীভাবে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করবেন

দেখুন প্রথমেই আপনাকে এটা বলার যে অ্যানিমিয়া হলে শুরু থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব দরকার। তিনি যা যা বলবেন সে সব মানতে হবে। কিছু আয়রন সাপ্লিমেন্ট, কিছু ভিটামিন তিনি হয়তো নিতে বলবেন। আপনাকে সেগুলো অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি দৈনন্দিন ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে, যা আপনার অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করবে।

১. আগেই জেনেছি যে ভিটামিনের ঘাটতির জন্য অ্যানিমিয়া হয়। তাই ভিটামিন সি-র ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে আপনি কমলালেবু বা পাতিলেবুর রসও আপনার ডায়েটে যোগ করুন।

২. আপনি যদি দিনে এক বার হলেও টক দই খেতে পারেন আর তাও হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে তাহলেও কিন্তু অ্যানিমিয়ার সমস্যা অনেকটা দূর হয়।

৩. সবুজ সবজি খাওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকোলি এই সবই আয়রনের খুব ভালো উৎস। তবে এগুলো খুব রান্না করে খেলে কিন্তু তেমন উপকার পাবেন না।

৪. আপনাকে কিছু রস খেতে হবে। তার মধ্যে প্রথমেই আসবে বিটের রসের কথা। এটি রক্ত তৈরি করতে ও পরিষ্কার করতে খুবই কার্যকরী। এর পাশে আপনি খান আপেল আর গাজরের রস। এগুলিও কিন্তু খুব ভালো আয়রন, কপার, পটাসিয়ামের মতো মিনারেলের উৎস।

৫. আপনার বাড়িতে তামার যদি পাত্র থাকে জল রাখার মতো, তাহলে সেটি বের করুন। এর মধ্যে সারা রাত জল রেখে দিন আর তা পরের দিন খান। আয়ুর্বেদ মতে আমাদের শরীরে মিনারেলের জোগান কিন্তু এভাবেও অনেকটা হয়ে যায়।

৬. ভিটামিনের আরেক উৎস হল খেজুর। আপনি রোজ সকালে বা বিকেলের দিকে নিয়ম করে খেজুর খেতে পারেন। এটি যেমন ভিটামিনের জোগান দেবে, তেমনই সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি আনবে।


রক্তাল্পতা: কারণ ও প্রতিকার

বর্তমানে বেশির ভাগ মহিলাই রক্তাল্পতায় ভোগেন৷ এই রোগের ডাক্তারি পরিভাষা অ্যানিমিয়া৷ তবে অনেকেই এই সম্পর্কে খুব একটা জানেন না৷ তবে এই রোগের কারণে মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা যায়৷ তাই আপনাদের জন্য রইল অ্যানিমিয়ার কারণ ও প্রতিকার৷

রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে তাকেই মূলত অ্যানিমিয়া বলা হয়৷ হিমোগ্লোবিন হল লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত একপ্রকার প্রোটিন যার মধ্যে আয়রন এবং ট্রান্সপোর্টস অক্সিজেন বর্তমান৷ এই অ্যানিমিয়া কিন্তু রক্তের সবচেয়ে সাধারন ব্যাধি৷

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই ব্যাধির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি৷ প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা অপুষ্টির কারণে এই রোগে আক্রান্ত হন৷ আবার আফ্রিকাসহ বেশ কিছু দেশে ম্যালেরিয়ায় করাণে তীব্র অ্যানিমিয়ার প্রকোপ দেখা যায়৷ যে সমস্ত মহিলা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও অ্যানিমিয়ার প্রভাব পড়ে, এছাড়াও সাধারনত অপুষ্টি ও হেলমিনথিয়াসিস (পরাশ্রয়ী কীট থেকে ছড়ানো রোগ) থেকেই এই ব্যাধির জন্ম হতে পারে৷

দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত হলে সাধারনত অনেকে এদিকে খুব একটা নজর দেননা৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এর কোন চিকিৎসা না হলে রোগীর সাধারন ভাবে রক্তক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়৷ এই রক্তক্ষয়ের ম্যাধমে প্রচুর পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা এবং হিমোগ্লোবিন শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়৷

অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণগুলি হল:

পাকস্থলীতে আলসার

হেমোরহইডস্

পাকস্থলীতে প্রদাহ বা গ্যাসট্রারাইটিস

পাকস্থলী বা কোলন ক্যানসার

শিশুর জন্মদান

ঋতুস্রাব – যে মহিলাদের ঋতুস্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি৷

অস্ত্রোপচার

রক্তদান – যারা প্রতিনিয়ত রক্তদান করে থাকেন তাদেরও রক্তাল্পতা দেখা যায়৷

অ্যানিমিয়ার উপসর্গ:

যাদের শরীরে রক্তাল্পতা খুব ধীরে ছড়ায় তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোন উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না৷ তবে যদি এই রোগ খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় তবে খুব বেশ কিছু উপসর্গও দেখা যায়৷ তেব উপসর্গ মূলত অ্যানিমিয়ার ধরণের উপর নির্ভর করে৷

সাধারন লক্ষণ গুলি হল:

  • ক্লান্তি
  • ঝিমুনী, অনীহা ও আলস্য অনুভূতি
  • অসুস্থতাবোধ
  • শ্বাসকষ্ট
  • মনোসংযোগের অভাব
  • বুক ধরফর করা
  • ঠান্ডা তাপমাত্রায় সংবেদনশীলতা

রক্তপরীক্ষা করলে এই রোগ নির্ণয় করা একেবারেই সহজ৷ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার গণনা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাপ সম্ভব৷ একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ক্ষেত্রে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ ৩২ থেকে ৪৩ শতাংশের মধ্যে থাকতে হয় এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১১ থেকে ১৫ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার হতে হবে৷

অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা:

  • অ্যানিমিয়ার প্রধান ওষুধ হল আয়রন সাপ্লিমেন্ট৷ এছাড়াও ফেরাস সালফেট  খাওয়া যেতে পারে৷
  • অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাসের পরিবর্তন৷ একমাত্র খাদ্যাভাসের মাধ্যমেই এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব৷ লৌহগুণ সমৃদ্ধ খাবার যেমন, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, খুবানি, বিন, মুসুর ডাল, ছোলার ডাল, সোয়াজাতীয় খাবার, মাংস, আলুবোখরা, বাদাম, কিশমিশ, ভাড়ালি, মাংসের মেটে প্রভৃতি৷

তবে অ্যামিনিয়ার যদি অন্য কোনও কারণ থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন এবং চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া কোন ওষুধ একেবারেই খাবেন না৷

অ্যানিমিয়ার জন্য বেশ কিছু জটিলতাও দেখা দিতে পারে,

গর্ভবতী মহিলা যাদের সিভিয়ার অ্যানিমিয়া রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা যায়৷ সাধারনত শিশুর জন্মের সময় ও পরে এই সমস্যা গুরুতর ভাবে দেখা যায়৷সাধারনতই শিশুর জন্মের সময় প্রচুর রক্তক্ষয় হয়৷ অ্যানিমিয়া থাকাকালীন প্রচুর রক্তপাত গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে৷ যদি মায়ের শরীরে গুরুতর অ্যানিমিয়া থেকে থাকে তবে শিশু প্রিম্যচিওর এবং অন্ডারওয়েট হতে পারে৷ এছাড়াও শিশু পরবর্তী কালে অ্যানিমিয়ার শিকারও হতে পারে৷

অ্যানিমিয়ার ফলে ক্লান্তি রোগীর জীবনের মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে৷ গুরুতর অ্যানিমিয়ার ফলে রোগী যে কোন কাজেই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন৷ দীর্ঘদিনের ক্লান্তি মানসিক অবসাদের কারণও হতে পারে৷

অ্যানিমিয়ার রোগীর দীর্ঘদিন চিকিৎসা না হলে তারা সংক্রমণজনিত কারণে অনেকবেশি পরিমাণে অসুস্থ হন৷

অ্যানিমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও পুষ্টিকর উপাদান উৎপাদনের জন্য হৃদপিন্ডের প্রচুর পরিমাণে রক্তের প্রয়োজন হয়৷ এতে বেশিভাগ ক্ষেত্রে হার্ট ফেল হওয়ার সম্ভবনাও থাকে৷

ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতিও অ্যানিমিয়ার একটি কারণ৷ এর ফলে নার্ভের ক্ষতি হতে পারে৷


রক্তাল্পতা কি ?

ভারতে প্রতিবছর রক্তস্বল্পতার 1 কোটি ঘটনা ঘটে। অ্যানিমিয়া এক ধরণের রোগ। রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে লাল রক্তকণিকা এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে। রক্তের কোষগুলিতে অক্সিজেন পৌঁছনোর জন্য  হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন। যদি ব্যক্তির কোষগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত ​​বা হিমোগ্লোবিনের অভাব থাকে তবে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। অক্সিজেনের অভাবে  ব্যক্তির মধ্যে  ক্লান্তির  লক্ষণ পাওয়া যায় । আপনার মনে যে প্রশ্নটি আসছে তা হল রক্তাল্পতা কী  ? সুতরাং, আসুন আজ রক্তাল্পতা সম্পর্কে বিশদ জেনে  নি ।

  • রক্তাল্পতা  কী ? (What is Anemia in Bengali)
  • রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) কী কারণে হয়? (What causes in Anemia in Bengali)
  • রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) এর লক্ষণগুলি কী কী? (What are the Symptoms of Anemia in Bengali)
  • রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) এর চিকিৎসা  কী? (What is the treatment of Anemia in Bengali)
  • রক্তাল্পতায় কী খাওয়া উচিত এবং কী এড়াতে হবে (অ্যানিমিয়া) ? (What to eat in Anemia and What to Avoid in Bengali)

রক্তাল্পতা  কী ? (What is Anemia in Bengali)

রক্তাল্পতা একটি ব্যাধি। এটি ব্যক্তির শরীরে রক্তের অভাব বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে ঘটে। যার কারণে শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং ব্যক্তি দুর্বল হতে শুরু করে। রক্তস্বল্পতা সহজেই মহিলা, শিশু এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিতে পারে।

রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) কী কারণে হয়? (What causes in Anemia in Bengali)

অনেক কারণে অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) হতে পারে।

  • পেটের আলসার বা প্রদাহের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
  • মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মহিলারা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হন।
  • শরীরে ভিটামিনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
  • কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তাল্পতা হতে পারে।
  • দীর্ঘস্থায়ী রক্তাল্পতা যেমন: ডায়াবেটিস, লুপাস, সংক্রমণ রক্তাল্পতার দিকে পরিচালিত করে।
  • বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
  • হেমোরয়েডস রোগের কারণে একজন ব্যক্তি রক্তাল্পতা বা রক্তাল্পতার অভিযোগ করেন ।(পাইলস থেকে মুক্তি পেতে আরও পড়ুন )

রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) এর লক্ষণগুলি কী কী? (What are the Symptoms of Anemia in Bengali)

রক্তাল্পতার সমস্ত লক্ষণ বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে আলাদা আলাদা ভাবে প্রকট হয়। এগুলি বিভিন্ন ধরণের লোকের মধ্যে দেখা যায়।

  • বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়া।
  • ত্বক হলুদ হওয়া।
  • দুর্বল হওয়া। 
  • মাথা ধরা । (আরও পড়ুন – ক্লান্তি কেন হয় )
  • মাথা ঘোরানো। 
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে পড়া।
  • বুক ব্যাথা করা। 
  • শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।
  • হৃদস্পন্দনের দ্রুত হওয়া ।

রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) এর চিকিৎসা  কী? (What is the treatment of Anemia in Bengali)

রক্তাল্পতা অ্যানিমিয়ার ধরণের ভিত্তিতে চিকিৎসা  করা হয়।

  • যদি ভিটামিনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয় তবে চিকিৎসকরা  ভিটামিন সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণের পরামর্শ দেন। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার ভিটামিন বি 12 এর ঘাটতি কাটাতে রোগীদের ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন। এই ইঞ্জেকশনটি রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে 1 মাস বা সারা  জীবন ধরে নেওয়া যেতে পারে।
  • যদি আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা দেখা দেয় তবে চিকিৎসক  রোগীকে ডায়েটে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। যদি মাসিকের রক্তপাতের কারণে রক্তপাত  না হয়ে  অন্য কোনও কারণে রক্তপাত হয় তবে ডাক্তার শল্যচিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন।
  • অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার  জন্য, চিকিৎসক  রোগীদের কোষগুলিতে লাল রক্ত ​​বাড়ানোর জন্য রক্তের বিনিময় করার পরামর্শ দেন।
  • সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার  জন্য অক্সিজেন, ব্যাথার ওষুধ,  এবং কিছু ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যাথার জটিলতা হ্রাস করতে শিরাগুলির মাধ্যমে ইনজেকশনের ব্যবস্থা করা হয়।
  • অস্থি মজ্জার সাথে সম্পর্কিত অ্যানিমিয়া ওষুধের পরিপূরক, কেমোথেরাপি, অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
  • গুরুতর রক্তাল্পতা রক্ত ​​সঞ্চালন বা প্লীহা অপসারণের কারণে হতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে চলমান রোগজনিত রক্তাল্পতার চিকিৎসার জন্য, চিকিৎসকরা প্রথমে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করবেন। গুরুতর ক্ষেত্রে, রক্তের বিনিময় বা কৃত্রিম এরিথ্রোপ্রোটিন, হ’ল এক ধরণের প্রোটিন যা কিডনিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে উত্পাদিত করা হয় ।
  • রক্তাল্পতার চিকিৎসা  করার আগে, একজন ব্যক্তির সংক্রমণের চিকিৎসা  করা উচিত। যাতে সংক্রমণ রক্তকে দূষিত না করে।
  • শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। যাতে রোগ শরীরে প্রবেশ করে না।

রক্তাল্পতায় কী খাওয়া উচিত এবং কী এড়াতে হবে (অ্যানিমিয়া) ? (What to eat in Anemia and What to Avoid in Bengali)

অ্যানিমিয়ায় পালং শাক, সয়াবিন, বিট, লাল মাংস, চিনাবাদাম মাখন, টমেটো, ডিম, বেদনা, রুটি, সিরিয়াল, বীজ এবং শুকনো ফল, সামুদ্রিক খাবার, আপেল, খেজুর ইত্যাদি খাবার  অন্তর্ভুক্ত  হয়

অ্যানিমিয়া রোগীদের, ট্যানিন জাতীয় খাবার যেমন কফি, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি এবং আঙ্গুর, আঠালো সমৃদ্ধ খাবার, দই, দুধ, পনির ইত্যাদি খাবার এড়ানো উচিত। 

 যদি আপনি রক্তাল্পতা সম্পর্কে আরও তথ্য এবং চিকিৎসা পেতে চান তবে আপনার নিকটস্থ হেমাটোলজিস্ট চিকিৎসকের (Hematologist) সাথে সাথে যোগাযোগ করুন।


https://www.myupchar.com/bn/disease/anemia

]


Post a Comment

1 Comments

  1. Find a Liver doctor in Ludhiana for Liver diseases like hepatitis A, hepatitis B, and hepatitis C and Fatty liver disease, Autoimmune conditions, Genetic conditions, Cancer, Cirrhosis. Hepatologists are known for diagnosing of the liver. they will help to cure form disorders and diseases of the liver as well their related organs.

    https://gastrogynae.com/best-liver-doctor-ludhiana/

    ReplyDelete