Facebook SDK

header ads

হাই ব্লাড প্রেশার

 হাইপারটেনশনের 10টি কারণ

মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে অথবা শারীরিক শ্রমের কারণে আপনার রক্তচাপ ওঠানামা করে। যদিও, বিশ্রামের সময়ে অথবা ধকল-শূন্য অবস্থাতেও – তা যদি সব সময়েই বেশি থাকে, তবে আপনার হাইপারটেনশন রয়েছে বলা যায়। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বলতে ধমনীতে প্রেশারের অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াকে বোঝায়, যা বহুদিন ধরে থাকে। এটাকে পৃথিবীতে সাধারণ দুরারোগ্য ব্যাধিগুলির একটা বলে ধরা হয়।

এর কারণের উপর নির্ভর করে, বিস্তৃতভাবে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাথমিক বা মূল এবং গোণ।

প্রাথমিক বা মূল হাইপারটেনশন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, হাইপারটেনশনের কারণগুলো অজানা থেকে যায় বা খুঁজে পাওয়াটা শক্ত হয়ে যায়। এগুলোকে সাধারণত মূল বা প্রাথমিক হাইপারটেনশন বলা হয়। এখানে কিছু কারণ দেওয়া হল:

  1. পারিবারিক ইতিহাস এবং জিন: বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে আপনার রক্তচাপের ওপরে জিনের 30-50% প্রভাব থাকতে পারে। আপনার যদি বাবা/মা, দাদু/ঠাকুমা বা ভাই/বোনের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে আপনারও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  2. বয়স এবং লিঙ্গ: ধমনী-সংক্রান্ত হাইপারটেনশন পুরুষদের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি দেখা যায়। সন্তানধারণ করার বয়সের মহিলারা ইস্ট্রোজেনের প্রতিরোধী ক্ষমতার জন্য হাইপারটেনশনে কম ভোগেন। মেনোপজের/রক্তস্রাব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, মহিলাদের ক্ষেত্রে হাইপারটেনশন হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের সমান হয়ে যায়। ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হয় যা হার্টের সংকোচন-সংক্রান্ত রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  3. মানসিক চাপ: বিভিন্ন গবেষণা মানসিক চাপ এবং হাইপারটেনশনের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বা দুরারোগ্য মানসিক চাপ অনেক ক্ষেত্রে হাইপারটেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  4. স্থূলতা: যেহেতু স্থূলতা শরীরের গঠনকে প্রভাবিত করে, সেহেতু এটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরে পরিবর্তনকারী বা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে যে স্থূলতা মূল হাইপারটেনশনের আনুমানিকভাবে 65-78% ঝুঁকি বহন করে।
  5. শারীরিক কসরতের অভাব: সুস্থ থাকতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দিনে কম করে 30 মিনিট ব্যায়াম করা জরুরি। শারীরিক সক্রিয়তাবিহীন জীবনযাপন হাইপারটেনশনসহ অনেক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অবস্থার সৃষ্টি করে।
  6. হরমোনের অনিয়ম: হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে হাইপারটেনশন হতে পারে । সেই জন্য মেনোপজের/রক্তস্রাব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার পরে বা সেই সময়ে, অথবা গর্ভধারণের সময়ে, মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অন্যান্য কারণগুলো হল অতিসক্রিয় বা কম সক্রিয় থাইরয়েড, অ্যালডোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি বা কুশিং-এর সিন্ড্রোম।

গৌণ হাইপারটেনশান

গৌণ হাইপারটেনশন বলতে সেই উচ্চ রক্তচাপকে বোঝায় যা অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য এবং সংশোধনযোগ্য কারণগুলোর জন্য হয়ে থাকে। আনুমানিক 5-10% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা গোণ হাইপারটেনশনের শিকার হন। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিচে দেওয়া হল:

  1. দুরারোগ্য অবস্থাগৌণ হাইপারটেনশনের কয়েকটা কারণ হল কিডনির রোগ, ফাইব্রোমাস্কিউলার ডিস্প্ল্যাসিয়া, রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস, কোয়ার্কটেশন বা মহাধমনীর সংকীর্ণতা, থাইরয়েডের সমস্যা, এবং নিদ্রাকালীন শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত।
  2. গর্ভধারণ: প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া বা গর্ভধারণজনিত হাইপারটেনশনও খুবই সাধারণ ঘটনা। এটা হরমোনের অনিয়মের কারণে হয়ে থাকে; তবে, এটা গর্ভধারণের সময়েই হয়ে থাকে বলে একে গৌণ হাইপারটেনশন হিসাবে ধরা হয়।
  3. ওষুধ সেবন: সাধারণ ওষুধপত্র যেমন বিশেষ কিছু গর্ভনিরোধক খাওয়ার ওষুধ, NSAIDs, স্টেরয়েড, ভেষজ প্রতিকার যেমন যষ্টিমধু, এবং অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট হাইপারটেনশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আমোদমূলক ড্রাগ যেমন কোকেন, হেরোইন বা অ্যাম্ফিটামিন রক্তচাপে আকস্মিক ওঠানামার সৃষ্টি করে। এগুলো কম বয়সে দুরারোগ্য হাইপারটেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  4. জীবনযাপন: আপনার জীবনযাপন এবং পরিবেশ অনেকরকমের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যাদের মধ্যে হাইপারটেনশন অন্যতম। লবণে পূর্ণ এবং ফল ও শাকসবজির অভাবপূর্ণ খাওয়াদাওয়া; শারীরিক সক্রিয়তাবিহীন জীবনযাপন; ধূমপান, যথেচ্ছ মদ্যপান এবং শারীরিক সক্রিয়তার অভাবে গৌণ হাইপারটেনশন হতে পারে। পরিবর্তন আনা যায় না এমন কারণগুলো ছাড়া, হাইপারটেনশন প্রতিরোধ করতে এবং কমাতে এই কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

হাইপারটেনশন কী Hypertension in Bengali 

হাইপারটেনশন কী 

উচ্চ রক্তচাপকে (হাই বিপি) হাইপারটেনশনও বলে। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদয়ের ধমনীতে রক্ত ​​স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতিতে প্রবাহিত হয়। সঠিক সময়ে এই সমস্যার চিকিৎসা করা হৃদরোগের ঝুঁকি রোধ করতে পারে। আপনি যদি এই সমস্যাটিকে উপেক্ষা করেন তবে পরে এই সমস্যাটি খুব মারাত্মক হয়ে ওঠে। যেমন হার্ট ফেলিওর, উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক এবং অন্যান্য জটিলতাগুলির মুখোমুখি ব্যক্তি কে হতে হয় । যে কোনো ব্যক্তিরই হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকতে পারে। কিছু গবেষণা অনুসারে, ভারতে 10 জনের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে অনেক লোক এই সমস্যাটিকে গুরুর্ত্ব দেন না। আসুন আজকের নিবন্ধে হাইপারটেনশন কী?  সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা যাক ।

  • হাইপারটেনশনের প্রকারভেদ? Types of Hypertension in Bengali
  • উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী What causes Hypertension in Bengali
  • উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী? Symptoms of Hypertension in Bengali
  • হাইপারটেনশন কীভাবে চেক করা হয়? Diagnosis of Hypertension in Bengali
  • উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কী? Treatment of  Hypertension in Bengali
  • উচ্চ রক্তচাপ রোধ কিভাবে করবেন ? Prevention of Hypertension in Bengali

হাইপারটেনশনের প্রকারভেদ? Types of Hypertension in Bengali

হাইপারটেনশনের প্রধান দুটি ধরণ রয়েছে।

  • প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ – প্রাথমিক হাইপারটেনশনের কারণ সবচেয়ে সাধারণ।  বেশিরভাগ মানুষের যাদের এই ধরণের রক্তচাপ হয় তাদের বয়স বাড়ার সাথে এই রক্ত চাপের বিকাশ ঘটে ।
  • মাধ্যমিক হাইপারটেনশন – কোনো চিকিৎসা  বা নির্দিষ্ট ওষুধের ব্যবহারের ফলে মাধ্যমিক উচ্চ রক্তচাপ ঘটে। এটি সাধারণত চিকিৎসা করার পরে নিরাময় হয় হাইপারটেনশন ঘটানো ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করার পরে নিরাময় করা হয়।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী What causes Hypertension in Bengali

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে।

  • উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত স্থূলতার কারণে একজন ব্যক্তি অনেকগুলি রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
  • যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই জাতীয় লোকদের ধূমপানের বন্ধ  করা উচিত এবং যদি হৃদয়ে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকে তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • ডায়েটে খুব বেশি নুন সেবন করলে একজন ব্যক্তির হাইপোটেনশনের ঝুঁকি থাকে। তাই, যে সমস্ত লোকেরা বেশি পরিমাণে লবণ গ্রহণ করেন তাদের কম পরিমাণে লবণ গ্রহণ করা উচিত।
  • উচ্চ রক্তচাপের একটি কারণ হ’ল স্ট্রেস। একজন ব্যক্তি যখন এত বেশি চাপ নেওয়া শুরু করে যে এটি তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। স্ট্রেস করার ফলে অন্যান্য ধরণের রোগের শিকার হয়। কিছু গবেষণা অনুসারে, চরম মানসিক চাপের মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
  • যোগব্যায়াম, ব্যায়ামের মতো নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করে না  এমন লোকেদের  মধ্যে  হাইপারটেনশনের বিকাশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণ এটি হয় । (আরও পড়ুন – সকালে অনুশীলন করার সুবিধা)

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী? Symptoms of Hypertension in Bengali

কিছু প্রাথমিক লক্ষণ এবং উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

যদি কোনও ব্যক্তি এই লক্ষণগুলি অনুভব করে তবে তিনি তার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন ।

হাইপারটেনশন কীভাবে চেক করা হয়? Diagnosis of Hypertension in Bengali

উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করার জন্য, চিকিৎসক রোগীর একটি পূর্ণ দেহ চেকআপ করেন। তবে যখন রক্তচাপ বেশি থাকে তখন লোকেরা ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন বিপি কতটা বেড়েছে।

ডাক্তার আরও কিছু তদন্ত করতে পারেন।

  • যেমন- মূত্র পরীক্ষা।
  • রক্ত পরীক্ষা। 
  • কোলেস্টেরল পরীক্ষা।
  • ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম – এই পরীক্ষাটি আপনার হৃদয়ের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করে। এতে চিকিৎসক হৃদরোগের লক্ষণগুলি পরীক্ষা করার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রামগুলির পরামর্শ দিতে পারেন।
  • তবে যাদের বয়স 20 বা 40 বছরের বেশি তাদের প্রতি বছর একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।  (আরও পড়ুন – কোলেস্টেরল কমাতে কী খাবেন)

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কী? Treatment of  Hypertension in Bengali

  • উচ্চ রক্তচাপ মানুষের মধ্যে সাধারণ হয়ে উঠেছে। এই কারণেই লোকেরা এই রোগের সঠিক চিকিত্সা পান না এবং এ কারণেই কিছু লোক উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করে ঝুঁকিগুলি হ্রাস করা যায়। এই জন্য, ডাক্তার নিম্নলিখিত কয়েকটি সুপারিশ করেছেন।
  • ডাক্তারের দেওয়া ওষুধটি উপযুক্ত সময়ে খাওয়া উচিত যাতে আপনার উচ্চ রক্তচাপ (120-80 mmHg) নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • আপনার ডায়েটে বেশি সবুজ শাকসবজি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। খাবারে অল্প পরিমাণে নুন খান।
  • যদি রোগী ওষুধ থেকে ত্রাণ পেতে সক্ষম না হয় তবে ডাক্তার হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের পরামর্শ দিতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ রোধ কিভাবে করবেন ? Prevention of Hypertension in Bengali

উচ্চ রক্তচাপ রোধে নিম্নলিখিত কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

  • উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত অনুশীলন, যোগব্যায়াম প্রতিদিন করা উচিত যাতে পেশী শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও ভাল হয়।
  • আপনার ডায়েটে খুব বেশি নুন খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • আপনার রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল খাওয়া উচিত নয়।

আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করছেন, তবে আপনার চেকআপের জন্য ক্লিনিকে যেতে হবে।

আমরা আশা করি আপনার প্রশ্নগুলি হাইপারটেনশন। এই নিবন্ধের মাধ্যমে উত্তর দিন।

হাইপারটেনশন সম্পর্কে আপনার যদি আরও তথ্যের প্রয়োজন হয় তবে আপনি Cardiologist সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপে করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ প্রায় একটি স্থায়ী রোগ হিসেবে বিবেচিত। এর জন্য চিকিৎসা ও প্রতিরোধ দুটোই জরুরি। তা না হলে বিভিন্ন জটিলতা, এমনকি হঠাৎ করে মৃত্যুরও ঝুঁকি থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ কি আসলেই কোনো জটিল ব্যাধি?
এই রোগ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। এটাই উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভীতিকর দিক। যদিও অনেক সময় রোগীর বেলায় কোনো লক্ষণ থাকে না, তবুও নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই এ রোগকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ও চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কী কী জটিলতা হতে পারে?
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন—হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদ্যন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হৃদ্যন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং এই অবস্থাকে বলা হয় হার্ট ফেইলিওর। রক্তনালির গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফ্রাকশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে, যা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এ ছাড়া চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে।

কী কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়?
৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেনশিয়াল রক্তচাপ বলে। সাধারণত বয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ায়, যা নিম্নরূপ:
 উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি নিকটাত্মীয়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও অন্যদের এর ঝুঁকি থাকে।
 ধূমপান: ধূমপায়ী ব্যক্তির শরীরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনি, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদ্রোগ দেখা দিতে পারে।
 অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ: খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।
 অধিক ওজন ও অলস জীবনযাত্রা: যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদ্যন্ত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। অধিক ওজনসম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।
 অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন—মাংস, মাখন ও ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়ে। ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
 ডায়াবেটিস: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এ ছাড়া তাঁদের অন্ধত্ব ও কিডনির নানা রকম রোগ হতে পারে।
 অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা: অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যদি এই মানসিক চাপ অব্যাহত থাকে এবং রোগী ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন, তবে এই উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নিতে পারে।

কিছু কিছু রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। এ কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:
 কিডনির রোগ।
 অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার।
 ধমনির বংশগত রোগ।
 গর্ভধারণ অবস্থায় একলাম্পসিয়া ও প্রি এ্যাকলাম্পসিয়া হলে।
 অনেক দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির ব্যবহার, স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন গ্রহণ এবং ব্যথা নিরামক কিছু কিছু ওষুধ খেলে।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কী করা উচিত?
 জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমানো সম্ভব নয়। তবে এ রকম ক্ষেত্রে যেসব উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেগুলোর ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।
 অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে: খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একবার লক্ষ্য অনুযায়ী ওজনে পৌঁছালে সীমিত আহার করা উচিত এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
 খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা: কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন—খাসি বা গরুর মাংস, কলিজা, মগজ, গিলা, ডিম কম খেতে হবে। কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ, অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন—সয়াবিন, ক্যানোলা, ভুট্টার তেল অথবা সূর্যমুখীর তেল খাওয়া যাবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো। আটার রুটি এবং সুজি-জাতীয় খাবার পরিমাণমতো খাওয়া ভালো।
 লবণ নিয়ন্ত্রণ: তরকারিতে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।
 মদ্যপান: মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
 নিয়মিত ব্যায়াম: সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।
 ধূমপান বর্জন: ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে। নিয়মিত বিশ্রাম, সময়মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে। নিজের শখের কাজ করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে।
 রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ হলে কি চিকিৎসা করাতেই হবে?
উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। অনেক রোগী কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে ওষুধ বন্ধ করে দেন। মনে করেন রক্তচাপ ভালো হয়ে গেছে, কাজেই ওষুধ খাওয়ার দরকার কী? এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরেও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন বা খেতে চান না। কারও কারও ধারণা, একবার ওষুধ খেলে তা আর বন্ধ করা যাবে না। আবার কেউ কেউ এমনও ভাবেন যে উচ্চ রক্তচাপ তাঁর দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না বা রোগের কোনো লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না বা প্রয়োজন মনে করেন না। মনে করেন ভালোই তো আছি, ওষুধের কী দরকার? এ ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীরাই হঠাৎ করে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে। তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চেক করাতে হবে।


উচ্চ রক্তচাপ? সাবধান!

ঘরে ঘরে রক্তচাপ যেন গা সওয়া ব্যাপার। প্রেসার বেড়ে মাথা ঘুরল বা ঘাড়ে ব্যথা শুরু হল, তখন পাড়ার ওষুধের দোকানে প্রেসার মাপিয়ে বা স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে কয়েক দিন ওষুধ খেয়ে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনা হল। তার পর আবার যে কে সেই। প্রেসার যখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, তখন আর খামকা ওষুধ খাওয়ার দরকার কী? অতএব, বন্ধ হল প্রেসারের ওষুধ! রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ে ধারণাটা বহু বাড়িতেই অনেকটা এই রকম! তা হলে কী করবেন? এবং কী করবেন না?

মারাত্মক সব রোগ ডেকে আনতে উচ্চ রক্তচাপের জুড়ি নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতবর্ষে ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন এ রকম রোগীর সংখ্যা ২০০৮ সালে ছিল ১৪০ মিলিয়ন। সেখানে ২০৩০-এ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছবে ২১৫ মিলিয়নে!

রক্তচাপ আসলে কী?

রক্তস্রোত রক্তনালীর দেওয়ালে যে চাপ সৃষ্টি করে সেটিই রক্তচাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় এর পরিমাপ ১২০/৮০। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ খানিক বাড়তে থাকে। তখন এই পরিমাপের থেকে আর একটু বেশি চাপকেও স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু ওপরের চাপ ১৪০-এর বেশি বা নীচের চাপ ৯০-এর বেশি হয়ে গেলে মুশকিল।

রক্ত চাপ দু’ভাবে বাড়তে পারে। অ্যাকিউট আর ক্রনিক। হঠাৎ কোনও উত্তেজনার বশে বা অন্য কোনও কারণে দুম করে রক্তের চাপ খুব বেশি বেড়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। এটি অ্যাকিউট হাই ব্লাড প্রেসার। এতে আচমকা হার্ট ফেলিওর হতে পারে। স্ট্রোকও হতে পারে।

ক্রনিক হাই ব্লাড প্রেসারের ক্ষেত্রে চাপের পরিমাপ হয়তো হঠাৎ করে খুব বেশি থাকে না। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে রক্তের উচ্চচাপ পুষে রাখার জন্য হার্টের পেশির ক্ষতি হতে পারে। কারণ, বেশি রক্ত পাম্প করতে হার্টের ওপর বেশি চাপ পড়ে। তা ছাড়া অনেক দিন ধরে রক্তচাপে ভুগলে রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায়। সেগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। রক্তনালীর ভেতরের দেওয়াল মোটা হয়ে যায়। ফলে ব্লক তৈরি হয়। সব মিলিয়ে হার্ট ফেলিওর বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।

আবার রক্তনালীতে ‘ব্লক’ তৈরি হওয়ার জন্য বা বেশি রক্তচাপের কারণে নালীর মধ্যে রক্ত দলা পাকিয়ে যেতে পারে। সেই দলা বা ক্লট মাথায় পৌঁছে স্ট্রোক হতে পারে। আবার রক্তের চাপ সহ্য করতে না পেরে কোনও ধমনি ছিঁড়ে গিয়েও স্ট্রোক হতে পারে।

অতএব, রক্তচাপ পুষে রাখার মাসুল হতে পারে মারাত্মক!

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

এমনতি এর তেমন কোনও লক্ষণ নেই। তাই তলে তলে যে রক্তের চাপ বেড়ে গিয়েছে, এটা অনেকেই টের পান না। এ জন্য ৩৫ বছরের পর থেকে মাঝে মাঝেই ব্লাডপ্রেসার মাপা দরকার। আর দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে ফি-হপ্তায় এক বার প্রেসার মেপে দেখা উচিত। বাড়িতেই রাখতে পারেন প্রেসার মাপার যন্ত্র।

প্রেসার কেন বাড়ে?

১) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। বয়সের সঙ্গে রক্তচাপ সমানুপাতিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা জানাচ্ছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন। আর পঞ্চাশের কোঠায় বয়স হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনে ৫ জন। বয়স ৭০ বা তার বেশি হলে প্রতি দুই জনের মধ্যে এক জনের উচ্চ রক্তচাপ থাকবে।

২) খাবারে বেশি নুন খাওয়ার জন্য প্রেসার বাড়তে পারে।

৩) ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসার বাড়ে।

৪) শারীরিক পরিশ্রম না করে বসে বসে থাকলে ওজন বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপ।

৫) মানসিক চাপ বা উত্তেজনা বাড়লে অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে নরঅ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

খাবার ও রক্তচাপ

রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে প্রথমত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন বাড়লে হার্ট বেশি পাম্প করবে। ফলে রক্তচাপ বাড়বে। তাই উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুতরাং খাবার এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এমনিতে উচ্চ রক্তচাপের জন্য দরকার ড্যাশ ডায়েট অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ খাবার। রোজকার খাবারে থাকবে রকমারি ফল ও প্রচুর শাকসব্জি। কারণ, এ সবের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম ও প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগলে অ্যানিমাল প্রোটিন কম খেতে হবে।

রক্তচাপ বেশি হলে নুনের কথা মাথায় রাখতে হবে। নুনের সোডিয়াম ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। দিনে ২-৩ (ছোট চামচের হাফ চামচ) গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয়। বাদ দিতে হবে প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড, টিন ফুড, প্যাকেট ফুড, রেডি টু ইট ফুড, আচার, চিপস ইত্যাদি। কারণ এগুলোতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে নুন মেশানো থাকে।

প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ জল হল ডাইইউরেটিক। জল শরীরের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। জল শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক পদর্থগুলোকে বের করে দেয়। এগুলো বেরিয়ে গেলে শরীরে রক্তের চাপ কমে।

স্ট্রেস ও রক্তচাপ

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়লে রক্তচাপ বাড়ে। আবার উল্টোটাও হয়। রক্তচাপ বাড়লে স্ট্রেস বাড়ে। স্ট্রেস বাড়লে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে। ফলে প্রেসার বাড়ে। তাই রক্তচাপকে বশে রাখতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। সোজা কথায় স্ট্রেস বা মানসিক চাপকে প্রশ্রয় না দিয়ে তার স্ট্রেসের মোকাবিলা করা।

কী ভাবে স্ট্রেসের মোকাবিলা করবেন?

ইচ্ছে করলেই স্ট্রেসের কবল থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারেন। স্ট্রেসে যিনি ভুগছেন, তিনি চাপে থাকেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর বুদ্ধি মোটেই লোপ পায় না। তাই একটু সচেতন হলেই স্ট্রেসকে কমিয়ে আনা যায়। এর কয়েকটি ধাপ আছে।

প্রথম ধাপটি সত্যিই স্ট্রেসে ভুগছেন কি না তা খতিয়ে দেখা। স্ট্রেসে শারীরিক, মানসিক ও ব্যবহারগত কিছু পরিবর্তন বা সমস্যা হতে পারে। যেমন:

ঘুম একেবারেই চলে যায়। অনেকের আবার ঘুম অনেক বেশি হয়। সারা দিনই ঝিমুনি লাগে।

খিদের ইচ্ছে চলে যাওয়া বা বেশি খিদে পায়।

শরীর-মনে ক্লান্তি। অলসতা দেখা দেয়।

মাথার যন্ত্রণা হতে পারে।

এগুলি সব শারীরিক পরিবর্তন।

মানসিক বা ইমোশনাল পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে

কিচ্ছু ভাল না লাগা।

ঘন ঘন মুড সুইং হওয়া।

মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া।

ভয় ভীতি তৈরি হওয়া।

খিটখিটে মেজাজ।

অধৈর্য হয়ে যাওয়া।

কিছু ব্যবহারগত পরিবর্তন হয়। যেমন,

সিগারেট খাওয়া বেড়ে যায়।

যাঁরা সিগারেট খেতেন না, তাঁরাও খেতে শুরু করেন।

অ্যালকোহল বেশি খাওয়া হয়ে যায়।

কোনও নির্দিষ্ট ড্রাগের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়।

এই সমস্যাগুলোর কিছু কিছু দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি স্ট্রেসে ভুগছেন।

চিকিৎসা

কেউ কেউ এমনিতেই খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। কিছু একটা হতে পারে এই ভয়ে। ‘যদি’ হয়, তার ওপর নির্ভর করেই তাঁরা ভেতরে ভেতরে প্রবল মানসিক চাপে থাকেন। সে ক্ষেত্রে দরকার মতো কাউন্সেলিং করে ওষুধ খেতে হতে পারে।

আর কিছু হয় তাৎক্ষণিক স্ট্রেস। কোনও একটা ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা করে করে চাপ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে নিজেই সচেষ্ট হলে স্ট্রেসকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন।

কী ভাবে?

স্ট্রেসকে দূরে সরাতে গেলে দরকার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা। এতে অভ্যস্ত হলে স্ট্রেস অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যায়।

১) নিয়মিত সঠিক এক্সারসাইজ করা। নিজে নিজে ভুলভাল কিছু না করে ট্রেনারের কাছে গিয়ে এক্সারসাইজ শিখলে ভাল হয়। এক্সারসাইজ করলে কিছু হ্যাপি হরমোন ক্ষরণ হয়। যার থেকে একটা ফিল গুড এফেক্ট আসে। অলসতা, ক্লান্তি দূর হয়। শরীর ঝরঝরে লাগে।

২) হেলদি লাইফস্টাইলে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল খাওয়াদাওয়া। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। জাঙ্কফুড, প্যাকেট ফুড একেবারে চলবে না। এতে ওজন বাড়ে। ওজন বাড়লে রক্তের চাপও বাড়ে। বরং মরসুমি ফল আর শাকসব্জি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল নার্ভকে উজ্জীবিত করে। ফলে মন তরতাজা হয়। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। জল শরীরের টক্সিন বের করে দেয়।

৩) সারা দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। ঘুমের ব্যাঘাত হলে সেটাকে আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। দরকারে ডাক্তারের পরামর্শমতো স্ট্রেস কমানোর ওষুধ খেয়ে ঘুমকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ বায়োলজিকাল ক্লক ঠিক করতে হবে। শুধু ওষুধ নয়, নির্বিঘ্ন ঘুমের কিছু রেসিপি বা টোটকা আছে। সেগুলি মেনে চললে ভাল ঘুম হয়।

ঘুমের রেসিপি

ঘুমের রেসিপির মূল কথাই হল ঘুমের জন্য শরীর ও মনকে প্রস্তুত হয়। সেগুলি হল:

১) ঘুমের তিন ঘণ্টা আগে থেকে জল খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। তাতে ঘুমের সময় বার বার বাথরুম যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

২) ঘুমের আগে টিভি দেখা চলবে না। বরং ম্যাগাজিন বা হালকা কোনও গল্পের বই পড়তে পারেন।

৩) সারাদিনের পাতা বিছানার চাদর তুলে ফেলে ঘুমের জন্য আলাদা কোনও বিছানার চাদর পাতলে ভাল হয়।

৪) ঘুমের আগে জোরালো আলো না জ্বালিয়ে হালকা আলো জ্বালানো

৫) ঘুমের ঠিক আগে কোনও উত্তেজক কথাবার্তায় যাবেন না।

৬) শুয়ে ঘুম না এলে উঠে কোনও বই পড়বেন।

৪) যতই স্ট্রেস থাকুক, মন ভাল না থাকুক, আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। ভাল লাগছে না বলে যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।

৫) আর এই হেলদি প্র্যাকটিস ধরে রাখতে একটি ডায়েরি মেনটেন করুন। তাতে সারা দিনে কী কী করলেন, সব লিখবেন। এক সপ্তাহ আগে দু’ঘণ্টাও ঘুমোতে পারতেন না, এখন সাত ঘণ্টা ঘুমোচ্ছেন, এটা লিখলে দেখবেন নিজেই নিজেকে মোটিভেট করতে পারছেন। ডায়েরি লিখলে আপনার হেলদি লাইফস্টাইলকে জিইয়ে রাখতে পারবেন। তাতে স্ট্রেস বশে থাকবে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ।

সর্বোপরি প্রেসার আয়ত্তে আনতে

নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। কোনও ভাবেই প্রেসারের ওষুধ খেতে ভুলবেন না। প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও সেটি বজায় রাখতে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। নইলে আবার প্রেসার বেড়ে যাবে।

সমস্যা হোক বা না হোক, কয়েক মাস পর পর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করাতে হবে। দরকারে ডাক্তার ওষুধ বদলে দেবেন।

পাতে নুন খাবেন না। নোনতা খাবার একেবারেই নয়।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার কমিয়ে দিন। মদ্যপান ধীরে ধীরে কমান। ধূমপান করবেন না।

শুয়ে বসে দিন কাটাবেন না। পরিশ্রম করুন। এতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণে এনেও ওজন কমানো দরকার।

টেনশন কমান। প্রয়োজনে প্রাণায়াম আর ধ্যান করুন।

এক বার ডাক্তার দেখিয়ে দীর্ঘ দিন সেই একই ওষুধ খেয়ে যাবেন না।

প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘুম খুব প্রয়োজন। তাই দিনের পর দিন ঘুম না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা! জেনে নিন তার ৭ অব্যর্থ উপায়ে

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন খুব সাধারণ সমস্যা হলেও কখনও কখনও তা প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনিয়মিত ডায়েট, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ এবং শরীরচর্চার অভাব— এ সবই উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের অন্যতম কারণ। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রতি বছর ভারতে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের কারণে। এই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের এক তৃতীয়াংশই উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
চিকিত্‍সকদের মতে, জীবনযাত্রায় এবং খাদ্যতালিকায় সামান্য কয়েকটি পরিবর্তন আনতে পারলে ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু কী ভাবে? আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
১) উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমেই নুন খাওয়া কমাতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত নুন রক্তে মিশে শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে রক্তচাপ অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যাও। তাই রান্নায় ছাড়া, খাবার পাতে কাঁচা নুন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে, রান্নাতেও কম নুন দিন।
২) কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম যা রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দিনের যে কোনও সময়, সারাদিনে অন্তত একটা কলা খাবার চেষ্টা করুন।
৩) প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ মতে, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে মধু অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। ১ কাপ উষ্ণ জলে ১ চামচ মধুর সঙ্গে ৮-১০ ফোঁটা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খেতে পারলে রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
৪) পুষ্টিবিদদের মতে, কমলালেবুর রসের সঙ্গে ডাবের জল মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খেতে পারলে রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৫) উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত তেল আর মশলাদার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। মশলাদার খাবারের বদলে পাতে বেশি করে সবুজ শাক-সবজি রাখতে পারেন। সিদ্ধ বা সামান্য তেলে রান্না করা সবজি শরীরে ক্যালোরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবার সমৃদ্ধ সবুজ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬) ওজন কমাতে আর একই সঙ্গে শরীরের শক্তি বাড়াতে ওটসের কোনও বিকল্প নেই! পুষ্টিবিদদের অনেকে তাই সকালে ওটস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ওটসে খুব কম মাত্রায় সোডিয়াম থাকে। তা ছাড়াও এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার যা রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় কাবু, কমে আসছে হাঁটাচলার গতি? জেনে নিন কী করবেন
৭) তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, লাইকোপিন, পটাসিয়াম এবং ফাইবার যা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। অ্যামিনো অ্যাসিড এল-সিট্রুলিন সমৃদ্ধ তরমুজ শুধু রক্তচাপই নয়, শরীরের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সুতরাং, মেনে চলুন এই কয়েকটি সাধারণ নিয়ম, কিছুটা বদলে ফেলুন জীবনযাত্রার ধরন আর সুস্থ থাকুন ওষুধের সাহায্য ছাড়াই। তবে কারও যদি ডায়াবেটিস বা ওই জাতিয় কোনও সমস্যা থাকে তাহলে এগুলি পরখ করে দেখার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।

ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ১০ উপায়

উচ্চ রক্তচাপকে তেমন গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঘটনা দিনদিন বাড়ছে। এসব এড়ানো কিন্তু কঠিন নয়। ওষুধ ছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কীভাবে? দেখুন ...

রেডিমেড খাবার এড়িয়ে চলুন
রান্নার সময় বাঁচানো, আধুনিকতা বা স্বাদ পরিবর্তন- যে কারণেই হোক না কেন, তৈরি খাবারের প্রতি আজকাল অনেকরই ভীষণ আগ্রহ। অথচ রেডিমেড খাবারে থাকে প্রচুর লবণ, যা রক্তের চাপ বাড়ায়। এ কারণে শুধু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক নয়, কিডনি কিংবা ডিমেনশিয়ার মতো রোগও হতে পারে। তাই ঘরের রান্না খাওয়াই শ্রেয়।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পটাসিয়ামযুক্ত খাবার
অনেকে ধরেই নেন যে, উচ্চ রক্তচাপ হলেই ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তা সব সময় সত্য নয়। আলু, মিষ্টি আলু, কলা মটরশুঁটি, কসমিস, আলুবোখারা, টমেটো ইত্যাদি পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের নর্থওয়েষ্টটার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

কোকোযুক্ত কালো চকলেট
চকলেটপ্রেমীরা কোকোযুক্ত কালো চকলেট খেতে পারেন, তবে চকলেটে কোকোর পরিমাণ কমপক্ষে শতকরা ৭০ ভাগ থাকা উচিত। তবে হ্যাঁ, চকলেট কিন্তু দুটোর বেশি নয়! এতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, অতিরিক্ত ওজন ধমনীর রক্তের চাপ বাড়ার বড় কারণ। এই তথ্য পাওয়া গেছে জার্মনির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে করা এক গবেষণা থেকে ।

জবাফুলের চা
দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি নিয়মিত পান করলেও কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ কমে, বিশেষ করে প্লেন পানি ও ভেষজ চা। জানান জার্মানির এর প্রধান ডা. মার্টিন।

লাল বিটের রস ও ভেষজ চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
ভেষজ চায়ের উদ্ভিজ্জ পদার্থ, ফেনোলিক এসিড রক্তচাপ কমিয়ে আনতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। বোস্টনের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে করা এক সমীক্ষায় পাওয়া গেছে এই তথ্য। আরো জানানো হয়, ট্যাবলেট ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর লাল বিটের রস বা জুস।

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট কম, সয়াবিন বেশি
ভাত, নুডলস বা এ ধরনের শর্করা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বেশি করে সয়াবিন খাওয়া উচিত। খাওয়া যেতে পারে টোফু বা দুধের জিনিস। আমেরিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন 'সার্কুলেশন' জানাচ্ছে এই তথ্য।

স্ট্রেসকে 'না' বলুন
মানসিক চাপের কারণে শরীরে পেশীগুলোতেও চাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। তাই দিনে অন্তত দুইবার পাঁচ মিনিট করে যেকোনো ধরনের হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা বা মেডিটেশন এবং হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

পছন্দের মিউজিক শুনুন
ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, পছন্দের গান, বিশেষ করে উচ্চাঙ্গ সংগীত বা বা হালকা কোনো মিউজিক উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তা ছাড়া নিজে গান গাইতেও পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, মিউজিকটি হতে হবে নিজের পছন্দের। তবেই কেবল সুফল পাওয়া সম্ভব।

নাক ডাকা রক্তচাপ বাড়ায়
জার্মানিতে প্রতি চারজনের একজন নারী এবং প্রতি দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ রাতে ঘুমের সময় নাক ডাকে। নাক ডাকার সময় অক্সিজেন আসা যাওয়া বাধাগ্রস্ত হলে স্ট্রেস হরমোন নির্গমন বেশি হয়। এর ফলে ধমনীতে রক্তের চাপ বেড়ে যায়। কারো নাক ডাকার সমস্যা থাকলে তা অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার: নীরব এই ঘাতক থেকে বাঁচতে আপনি যা যা করবেন

বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন।

'বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮'-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কী?

হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

দু'টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় - যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।

প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি।

কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।

অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়।

যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ হলে কী সমস্যা তৈরি হয়?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে বা হার্ট ফেল করতে পারে।

এছাড়া, এমন সময় রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

আর বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে একজন মানুষ অন্ধত্বও বরণ করতে পারেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা আনোয়ার জানান যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যায় না।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "যাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না, তাদের ক্ষেত্রে সেটিকে প্রাইমারি বা এসেনশিয়াল ব্লাড প্রেশার বলা হয়ে থাকে।"

"উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা যায় না। লক্ষ্মণ না থাকলেও দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং রোগী হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তার মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।"

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অন্তর ব্লাডপ্রেশার মাপা দরকার বলে মন্তব্য করেন মিজ আনোয়ার।

আর যারা দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতি সপ্তাহে একবার প্রেশার মেপে দেখা উচিত।

তবে একবার রক্তচাপ বেশি দেখা গেলেই যে কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সেটা বলা যাবে না।

পর পর তিন মাস যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে যে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।

লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:

  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো
  • ঘাড় ব্যথা করা
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
  • রাতে ভালো ঘুম না হওয়া
  • মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া
  • অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

  • সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
  • পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
  • প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে
  • ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
  • দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
  • শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে
  • উচ্চ রক্তচাপ হলে কী করবেন

    জীবনযাপনে পরিবর্তন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে:

    • খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া - লবণের সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।
    • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা - ধূমপান শরীরে নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনী ও শিরার নানারকম রোগ-সহ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
    • ওজন নিয়ন্ত্রণ করা - শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। বেশি ওজনের মানুষের মধ্যে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়।
    • নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা - নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃৎপিণ্ড সবল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
    • মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কম করা - রাগ, উত্তেজনা, ভীতি অথবা মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘসময় ধরে মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
    • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা - মাংস, মাখন বা তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেও রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত করে ফেলে। এর ফলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যেতে পারে।

    এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

  • হঠাত্‍ প্রেসার বেড়ে গেলে বা কমে গেলে চটজলদি যা যা করবেন জেনেনিন

    হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সঠিক খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে এর থেকে দূরে থাকা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য এমন সব খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে থাকবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম।কারণ খাদ্যের এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বিবিহীন দুধ বা দুধজাত খাদ্য যেমন দই ইত্যাদিতে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম। তাজা ফল যেমন আপেল, কলা আর শাকসবজি হচ্ছে পটাশিয়ামের ভালো উত্‍স। টমেটোতেও আছে বেশ পটাশিয়াম।

    প্রেসার বেড়ে গেলে, বেশি ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায় দানা শস্য বা গোটা শস্য, বিচি জাতীয় খাবার, বাদাম, শিমের বিচি, ডাল, ছোলা, লাল চালের ভাত, লাল আটা, আলু, সবুজ শাকসবজি, টমেটো, তরমুজ, দুধ ও দই ইত্যাদিতে।

    ১) কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বিবিহীন দুধ বা দুধজাত খাবার প্রতিদিন খেতে হবে ২ থেকে ৩ সার্ভিং। এক সার্ভিং দুধ বা দুধজাত খাবার মানে আধা পাউন্ড বা এক গ্লাস দুধ অথবা এক কাপ দই।

    ২) ফল ৪ থেকে ৫ সার্ভিং প্রতিদিন। টুকরো টুকরো করে কাটা আধা কাপ ফল কিংবা মাঝারি সাইজের একটা আপেল বা অর্ধেকটা কলা অথবা আধা কাপ ফলের রস এতে হবে ফলের এক সার্ভিং। ফলের রসের চেয়ে আস্ত ফলই ভালো।

    ৩) শাকসবজি প্রতিদিন প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ সার্ভিং। শাকসবজির এক সার্ভিং মানে এক কাপ কাঁচা শাক বা আধা কাপ রান্না করা শাক।

    ৪) দানা শস্য প্রতিদিন দরকার ৭ থেকে ৮ সার্ভিং। দানা শস্যের এক সার্ভিংয়ের উদাহরণ হলো এক স্লাইস রুটি অথবা আধাকাপ ভাত বা এক কাপ পরিমাণ গোটা দানা শস্য।

    ৫) বিচি জাতীয় খাবার প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ সার্ভিং। বিচি জাতীয় খাবারের এক সার্ভিংয়ের উদাহরণ হলো এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ বাদাম বা আধাকাপ রান্না করা শিম বা মটরশুঁটি।

    হঠাত্‍ প্রেসার বেড়ে গেলে কী করবেন

    যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের জন্য এই আকস্মিক রক্তচাপ বৃদ্ধি বিপদের কারণ হতে পারে। যাদের রক্তচাপ নেই তাদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় কিছু নিয়মকানুন মানলে ঠিক হয়ে যায়। তবে সব সময় ঠিক নাও হতে পারে। ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রেই পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার পরও একে অবহেলা করা উচিত নয়। আবার বেশ কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

    উপসর্গ:- মাথাব্যথা (সাধারণত মাথার পেছনের অংশে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিয়মিত মাথাব্যথা, যা কয়েক ঘণ্টা পর ভালো হয়ে যায়), মাথা ঝিমঝিম করা, অবসাদগ্রস্ততা, বুক ধড়ফড় করা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশির দুর্বলতা, অনিয়মিত ঘুম, নাকডাকা, দিনের বেলায় নিদ্রালুতা, বুক ধড়ফড় করা এবং হঠাত্‍ ঘাম।

    করণীয়:- ১. হঠাত্‍ রক্তচাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের ওষুধ সেবন করা।

    ২.ওজন কমানো।

    ৩. লবণ কম খাওয়া।

    ৪. মদ্যপান বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করা।

    ৫. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটা।

    ৬. চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া।

    ৭. প্রচুর ফল ও শাকসবজি খাওয়া।

    ৮. মাছ বেশি খাওয়া।

    ৯. ধূমপান পরিত্যাগ করা।

    ১০. ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া) নিয়ন্ত্রণে রাখা।

    ১১. ঘন ঘন রক্তচাপ পরিমাপ না করা।

    ১২. হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকা। বন্ধু-পরিজনসহ সুখী জীবন-যাপনের চেষ্টা করা।

    ১৩. মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করা।

    ১৪. উচ্চমাত্রার ওষুধ গ্রহণ করে হঠাত্‍ রক্তচাপের অতিরিক্ত না কমিয়ে ফেলা।

    ১৫. যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া।

    হঠাত্‍ প্রেসার কমে গেলে কী করবেন

    উচ্চরক্তচাপের মতোই নিম্ন রক্তচাপও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। লো ব্লাড প্রেসারের আরেক নাম হাইপোটেনশন।অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়ে থাকে।
    চিকিত্‍সকের মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে তাহলে তা লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। প্রেসার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না তখন এ রোগ দেখা দেয়।

    এ ছাড়া অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হওয়া, দেহের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে যেমন: রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে এবং অপুষ্টিজনিত কারণে লো ব্লাড প্রেসার দেখা দিতে পারে।

    গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ৬ মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেসার হতে পারে। মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বসা বা শোয়া থেকে হঠাত্‍ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, খুব বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদকম্পন, নাড়ি বা পালসের গড়ি বেড়ে গেলে বুঝবেন প্রেসার কমে গেছে বা আপনি লো-ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

    লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। তবে নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অযথা অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটা উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে কম ক্ষতিকর ও স্বল্পমেয়াদী সমস্যা। আর প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়, আসুন লো ব্লাড প্রেসারের প্রাথমিক কিছু চিকিত্‍সা জেনে নিই -

    লবণ-জল:- লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। কারণ এতে সোডিয়াম আছে। তবে জলে বেশি লবণ না দেয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, এক গ্লাস জলে দুই চা-চামচ চিনি ও এক-দুই চা-চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের চিনি বর্জন করাই ভালো।

    কফি-হট চকলেট:- হঠাত্‍ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। স্ট্রং কফি, হট চকোলেট, কমল পানীয়সহ যে কোনো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। আর যারা অনেক দিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন, তারা সকালে ভারী নাশতার পর এক কাপ স্ট্রং কফি খেতে পারেন।

    কিশমিশ:- কিশমিশ হাইপার টেনশনের ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক-দুই কাপ কিশমিশ সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো জল খেয়ে নিন।

    বিটের রস:- বিটের রস হাই ও লো প্রেসার দুটোর জন্য সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

    বাদাম:- লো-প্রেসার হলে পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটা পেসার বাড়াতে সহায়তা করে।

    পুদিনা:- ভিটামিন 'সি', ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে পুদিনাপাতা। পুদিনাপাতা বেটে এতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

    যষ্টিমধু:- আদিকাল থেকেই যষ্টিমধু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে রেখে দিন। ২-৩ ঘণ্টা পর পান করুন। এছাড়া দুধে মধু দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

    জনকল্যাণ স্বার্থে অবশ্যই এই পোস্টটি শেয়ার করুন আপনার কাছের মানুষদের " সুস্থ রাখুন ও সুস্থ থাকুন"


Post a Comment

0 Comments