Ads

SEARCH

Monday, 13 January 2020

যেভাবে আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখবেন

যেভাবে আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখবেন


  • ফুসফুসকে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কারণ শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালু রেখে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে এই যন্ত্র। এর প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। ফুসফুসে থাকা ডালপালার মতো অসংখ্য ছোট নালির মাধ্যমে বাতাস হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মানবদেহের শরীরে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অবস্থান পাশাপাশি। তাই হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখার জন্য ফুসফুসকেও সুস্থ রাখা অনেক জরুরি। 
  • তাই গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিকে সুস্থ রাখতে যত্নবান হতে হবে। ফুসফুস শক্তিশালী রাখার কিছু প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক 
  • নতুন বছরের রেজলিউশন? সুস্থতাকে গুরুত্ব দিলেই বা ক্ষতি কী! বরং নতুন বছরে নিজের ফুসফুসের প্রতি হয়ে উঠুন আরও একটু বেশি যত্নবান। সাধারণত ফুসফুস কতটা সুস্থ রয়েছে তা বোঝা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের হিসেবে তার বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা দেখে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ধারণক্ষমতা কমে। তাই বয়স ৪০ পেরলেই ফুসফুসের প্রতি নিয়মিত বেশি খেয়াল রাখা দরকার। কম বয়স থেকেই সেই যত্নের পাঠ শুরু হলে তা আরও ভাল ফলদায়ক।
  • শরীরের গঠন অনুযায়ী নারীর তুলনায় পুরুষের ফুসফুসের ধারণক্ষমতা বেশি হয়। কিন্তু দীর্ঘ অনিয়ম ও অযত্নে তা কমতে পারে। আবার একটু বেশি যত্ন নিলে নারীর ফুসফুসেরও ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে তাকে সুস্থ রাখা যায়। তাই ফুসফুসের যত্নের প্রশ্নে নারী-পুরুষ উভয়কেই হতে হবে সচেতন।
  • ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে নানা ধরনের ব্যায়াম, বিশেষ করে কিছু কার্ডিও এক্সারসাইজ। সঙ্গে অবশ্যই শ্বাসের কিছু ব্যায়াম, নিজের ওঠাবসার প্রতি খেয়াল রাখা, ধূমপান ত্যাগ— এ সবও ফুসফুসের যত্নের জন্য প্রয়োজন। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই যত শক্তিশালী হবে ও ফুসফুসের পেশীগুলি যত মজবুত হবে ততই তার বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে।

ফুসফুসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমূহ  

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে ১২-১৮ বার ও একজন শিশু ২০-৩০ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। তবে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে। আমাদের শ্বসনতন্ত্রের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম ফুসফুস যা ইংরেজিতে Lung নামে পরিচিত।  এই অঙ্গের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের রক্তে সৃষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ করে বাইরের বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ করে শরীরের রক্তপ্রবাহে সরবরাহ করা। এছাড়া বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি তৈরি করার জন্য মধ্যস্থদা-র চাপে প্রয়োজনানুসারে বাতাস সরবরাহ করাও এর অন্যতম কাজ। মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাঠাতেও ফুসফুস পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে।

ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যার কারণসমূহ

ফুসফুস জীবন রক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। ইদানিং ফুসফুসের নানা সমস্যা অনেক বেড়ে গেছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে বর্তমানে আমাদের ফুসফুসের বারোটা বাজতে বসেছে। যদিও একটি ফুসফুস নিয়ে বাঁচা সম্ভব তবে দুটি ফুসফুসই যদি রোগাক্রান্ত হয় তবে মৃত্যু অনিবার্য। প্রধানত দুটি কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, প্রথমত নানা ধরণের অসুখ বিসুখ ও দুর্ঘটনার কারণে এবং দ্বিতীয়ত জন্মগত অসুখের কারণে। অসুখ বিসুখ ও দুর্ঘটনার কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিভিন্ন পর্যায় নিম্নে দেওয়া হলো।  
১। কারও যক্ষ্মা হলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২। মশার কয়েল থেকেও ফুসফুসের ভীষণ ক্ষতি হতে পারে।
৩। দুর্ঘটনা জনিত কারণে ফুসফুসে আঘাত পেলে এর ক্ষতি হতে পারে।
৪। বিভিন্ন খনি অঞ্চলে ফুসফুসের অসুখ বেশী হয়। কয়লা খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন অসুখের ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫। কলকারখানা বা গাড়ির ধোঁয়াতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে যা ফুসফুসের জন্য অনেক বিপজ্জনক। এসব দূষিত পরিবেশ ফুসফুসকে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত  করেi

ফুসফুস শক্তিশালী  রাখার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় 

শ্বাসের ব্যায়াম: ফুসফুলের কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রতি দিন রুটিনে আনুন কিছু শ্বাসের ব্যায়াম। কেবল ইউ টিউব বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া দেখে নয়, রীতিমতো ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ডায়াফ্রাগমাটিক ব্রিদিং, পার্শড লিপস ব্রিদিং, নানা রকমের প্রাণায়াম ইত্যাদি অভ্যাস করুন। এতে ফুসফুসের পেশী শক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।


নিয়মিত শরীরচর্চা: সব ধরনের শরীরচর্চাই শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়ানোসহ ফুসফুসের জন্য অনেক উপকারী। এজন্য নিয়মিত সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, ট্রেকিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করা দরকার।

জল: শরীরের প্রয়োজন অনুপাতে জলের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। আপনার কতটুকু জল খাওয়া প্রয়োজন দিনে তা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছে। সেই নিয়মেই জল খান। জলের সঙ্গে ফুসফুসেরও সম্পর্ক আছে বইকি! ফুসফুসের মিউকোসাল লাইলিংগুলিকে সরু ও কার্যক্ষম করে তুলতে জলের ভূমিকা অপরিসীম।

লেবুজাতীয় ফল খাওয়া: প্রতিদিন লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এধরনের ফলে থাকে ভিটামিন “সি” যা ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে। এছাড়া, অন্যান্য খাবার যেমন- ক্যাপসিকাম, বাদাম, আদা, কুমড়া, গাজর, দুধ ফুসফুসের প্রদাহ ও রোগ প্রতিরোধ কার্যকর।

বসার ভঙ্গি: সোজা হয়ে না বসে শরীর কুঁচকে বা দুমড়ে মুচড়ে বসলে কিংবা সারা ক্ষণ আধশোয়া হয়ে বসলে ফুসফুসকেও কুঁকড়ে রাখে ও দীর্ঘ দিন এমন অভ্যাস বজায় রাখলে তা ফুসফুসের খাঁচাকে ছোট করে দেয়।

 অন্যান্য খাবার খাওয়া 

ক্যাপসিকামঃ ক্যাপসিকামে রক্ত সঞ্চালন এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করার সহায়ক উপাদান বিদ্যমান। তাই এ সবজিটি আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
বাদাম: বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়া্ম থাকে যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যকর কার্যাবলী অক্ষুণ্য রাখতে সহায়তা করে।
আদা: আদায় প্রদাহরোধী উপাদান থাকে যা ফুসফুস থেকে বিষাক্ত উপকরণ দূর করতে সাহায্য করে। তাই কাঁচা অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে এই আদা খাওয়া যেতে পারে।
কুমড়া ও গাজরঃ ভিটামিন সি যুক্ত কুমড়া ও গাজর ফুসফুসের রোগবালাই দূরে রাখতে ভুমিকা রাখে।
হলদি দুধ: প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে ফুসফুসের প্রদাহ ও রোগবালাই অনেক দূরে থাকে।

ফুসফুস ভালো রাখতে যা যা করতে হবে

  •  ধূমপান পরিহার করতে হবে।
    - বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। বাড়ির ছাদে ফুলের টবে গাছ লাগিয়ে হলেও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যায়।
    - নিয়মিত ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকা জরুরি।  
    - বাড়িঘর থেকে গুমোটভাব দূর করতে হবে।
    - মাঝে মাঝে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠলে পুরো দেহে রক্ত সঞ্চালিত হয়। এতে হৃৎপিণ্ডের পাশাপাশি ফুসফুসেরও কার্যক্ষমতা বাড়ে।
    - উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে ফুসফুস ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে।
    - যক্ষ্মা, হাঁপানি বা ফুসফুসের অন্য কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
    ফুসফুসের কাজ অবিরাম চলতে থাকে, কখনোই এর বিশ্রাম নেই। এই সুন্দর পৃথিবীতে ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে ফুসফুসের সুস্থতা অপরিহার্য। তাই চলুন ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে একটি সুস্থ জীবনধারার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং নিজের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নানান জটিলতা থেকে মুক্ত রাখি।


ফুসফুসের কাজ অবিরাম চলতে থাকে, কখনোই যেন এর বিরাম নেই।  এই সুন্দর পৃথিবীতে ভালোভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে ফুসফুসের সুস্থতা খুবই অপরিহার্য। তাই চলুন ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে একটি সুস্থ জীবনধারার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং নিজের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নানান জটিলতা থেকে মুক্ত রাখি।

Related Posts: